ঈদের আগেই খালেদার মুক্তি দাবি রিজভীর

ঈদের আগেই খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ। রোববার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি জানান। এ সময় তিনি বলেন, ‘অন্যথায় বেগম খালেদা জিয়ার ওপর যে জুলুম ও নিষ্ঠুর নির্যাতন করা হচ্ছে, তার জবাব দিতে জনগণ প্রস্তুত হয়ে আছে।’

রিজভী আহমেদ বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া শারীরিকভাবে প্রচন্ড অসুস্থ। দুই শো বছরের পুরনো একটি ধ্বংসাবশেষের মধ্যে বেগম জিয়া আটক রয়েছেন, ফলে নানা রোগ তাকে আক্রান্ত করছে। ভোটারশূন্য একটি নির্বাচন নিশ্চিত করতেই বেগম জিয়াকে বন্দী করে রাখা হয়েছে, অন্য কোন কারণে নয়। জনগণ কেবল একটি ৫-ই জানুয়ারি মার্কা নির্বাচনী তামাশা দেখার অপেক্ষা করছে।’

কারাগারে খালেদা জিয়ার অবস্থা বর্ণনা করেতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘কারাভবনের দেয়াল ও ছাদ থেকে অবিরামভাবে ঝরে পড়া সিমেন্ট-বালির ধুলোয় আক্রান্ত হয়ে দেশনেত্রী কাশি ও জ্বরে ভুগছেন। এতে করে কিছু দিন আগে অস্ত্রোপচার হওয়া চোখগুলো ধুলোবালিতে মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হচ্ছে। চোখ সারাক্ষণ লাল হয়ে থাকছে। হাত ও পায়ের প্রচন্ড ব্যথায় তার হাঁটাচলাতেও কষ্ট হচ্ছে। কারাগারে যেখানে রাখা হয়েছে, সেখানে প্রায়ই বিদ্যুৎ থাকে না। তাকে যে খাবার দেয়া হয় তা-ও অত্যন্ত নিম্নমানের।’

রিজভী বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার কারাবাস নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থা। বিএনপির পক্ষ থেকেও বারবার তার স্বাস্থ্যগত অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে এবং তাকে তার পছন্দ অনুযায়ী উন্নত হাসপাতালে চিকিৎসার জোর দাবি জানানো হয়েছে। কিন্তু সরকার দেশ-বিদেশের সোচ্চার দাবিকে উপেক্ষা করছে বেপরোয়া স্বৈরশাসকের নির্দয় ভঙ্গিতে। জামিন আটকে রেখে দেশনেত্রীর মানবাধিকার লঙ্ঘন শুধুমাত্র একজনের প্রতিহিংসার প্রতিফলন। আমি আবারও দাবি জানাই, জামিন নিয়ে কানামাছি খেলবেন না।’

সরকারের সমালোচনা করে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘মাদকবিরোধী অভিযানে বিচারবহির্ভূত হত্যা সম্পর্কে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘এ ধরনের মহৎ অভিযানে দু-একটি ভুল হতেই পারে’। মানুষের জীবন নিয়ে ভুল! ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্য মানবাধিকারকে ঠাট্টা করা। খুনি-সন্ত্রাসীদের ন্যায় বেআইনি হত্যাকে স্বীকৃতি দেয়া। কাউন্সিলর একরাম হত্যার অডিও শুনে, তার স্ত্রী ও মেয়েদের কান্না শুনে শুধু বাংলাদেশের মানুষের বিবেকই নয়, বিশ্ববিবেককেও নাড়িয়ে দিয়েছে। শুধু একরাম হত্যাই নয়, এখন পর্যন্ত মাদকবিরোধী অভিযানের নামে প্রায় ১৩০ জনকে বিচার বহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছে।’

রিজভীর অভিযোগ, ‘গত ৪ মাসে ২৫০ জন মানুষকে বিচার বহির্ভূতভাবে হত্যা করেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, যাদের বেশিরভাগই আবার তরুণ যুবক। তারা কে কতটুকু অপরাধের সাথে জড়িত, সে সম্পর্কে জনগণকে অন্ধকারে রেখে বিনা বিচারে হত্যার পেছনে সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে। নিহত পরিবারগুলো শোকের সাগরে ভাসছে। মানুষের দুঃখ-কষ্টকে নিয়ে তারাই এমন মন্তব্য করতে পারে, যারা অবৈধ ক্ষমতায় মশগুল থেকে মানবিক গুণাবলি হারিয়ে ফেলে।’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের উদ্দেশ্যে রিজভী বলেন, ‘ড্রাগ-চেইনের লিংক হিসেবে চুরি-চোট্টামি করা ছিঁচকে কিছু মানুষসহ প্রমাণহীন আরও অজ্ঞাত অনেকের বিরুদ্ধে হত্যা অভিযান চালানো হলেও চেইনের শীর্ষে বসে থাকা অমিত ক্ষমতাধর গডফাদাররা বসে আছে কী করে? প্রশ্ন হচ্ছে, সরবরাহের উৎস পথ আঁটকে যাচ্ছে না কেন ? তাহলে কারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মাদক ঢুকতে সহায়তা করছে? রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া কি উৎসমুখ খোলা থাকে? কারণ, এই উৎসমুখগুলো নিয়ন্ত্রণ করেন বদিদের মতো এমপিরা-প্রশাসনের সহায়তায়। বদিসহ ক্ষমতাসীনদের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা কীভাবে এতগুলো গোয়েন্দা সংস্থার চোখ ফাঁকি দিয়ে দেশ ছেড়ে গেল, জাতি তা জানতে চায়। সরকারই গডফাদারদের পালিয়ে যেতে সাহায্য করছে। ’

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী সরকার বাংলাদেশে ‘একটি এতিম জেনারেশন তৈরি করতে চায়।’ বেআইনি হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে সরকার তাদের টিকে থাকার সমাধান খোঁজে। কিন্তু তারা ভুলে গেছে, অন্যায়ের প্রতিশোধ প্রকৃতি নিজেই নেয়। একটি বেআইনি হত্যা আরও অনেক হত্যার বিস্তৃতি ঘটায়।’

মাদকের বিস্তার ঘটিয়েছে আওয়ামী লীগ-এমন মন্তব্য করে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, তাদের সহায়তাকারী হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্য। তাদের কারণে এ সাড়ে নয় বছরে মাদকে ছেয়ে গেছে দেশ। প্রতিবেশি দেশ যথা ভারত থেকে ফেনসিডিল ও মিয়ানমার থেকে ইয়াবা আমদানিকে মদদ দিয়ে যুবসমাজকে ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে। কথায় আছে, কোনো জাতিকে ধ্বংস করতে হলে দুটি জিনিস ধ্বংস করতে হয়-এক হলো শিক্ষা, দুই হলো যুবসমাজ। বর্তমান ভোটারবিহীন সরকার এ দুটি কাজই করতে পেরেছে দক্ষতার সাথে।’

রিজভী মনে করেন, শিক্ষা ব্যবস্থাকে তারা পুরোপুরি ধ্বংস করে এখন মাদক ঢুকিয়ে দিয়ে যুবসমাজকে ধ্বংস করছে। এখন কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধের’ নামে অ্যাডহক ভিত্তিতে সমস্যা সমাধানের চেষ্টায় বিচারহীনতার সংস্কৃতিকে আরেক দফা উস্কে দিচ্ছেন ওবায়দুল কাদের সাহেবরা।

তিনি বলেন, ‘গতকাল (শনিবার) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, একরাম হত্যা তদন্ত করবে একজন ম্যাজিস্ট্রেট। এসব মনভোলানো কথায় জনগণের আতঙ্ক দূর হবে না। এ ধরনের বক্তব্যও একটা তামাশা।’

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদীন ফারুক, হাবিবুর রহমান হাবিব, সহ প্রচার সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।